রাত পোহালে নির্বাচন || দেশজুড়ে নিরাপত্তা চাদর

রাত পোহালেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ দেশজুড়ে কয়েকস্তরে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে।
গত দু’দিন ধরে ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়েছে। পুলিশ-র্যাব নিরবচ্ছিন্নভাবে টহল দেয় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে। বাংলামোটর এলাকায় সেনা সদস্যদের যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সারাদেশে সেনাবাহিনীর টহল ছিল উল্লেখযোগ্য। নৌবাহিনীর সদস্যরাও উপকূল এলাকায় টহল দিয়েছেন।
রাজধানীসহ সারাদেশের হোটেল, মেসে কোনো সন্ত্রাসী বা দাগী আসামি রয়েছে কি-না, সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী। জামায়াতের আধিপত্য আছে যেসব এলাকায়, সেখানে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা। রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা গুলশান ও বারিধারায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। যানবাহন তল্লাশির আওতায় আনা হচ্ছে। চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি ফুট প্যাট্রোল, ভেহিকল প্যাট্রোল ও মোবাইল প্যাট্রোল বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে কেউ যাতে নাশকতামূলক কর্মকান্ড করতে না পারে সেজন্য সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো নৈরাজ্য ঠেকাতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সোয়াট ও বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও। নিরাপত্তার প্রয়োজনে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করবে র্যাব। গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, কোথাও কোথাও ভোটের মাঠে নৈরাজ্য ও সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে। ৩০০টি নির্বাচনী আসনকে মূলত মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটনের বাইরে এবং বিশেষ এলাকা (পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর) এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক এলাকার ভোটকেন্দ্রকে 'সাধারণ' ও 'গুরুত্বপূর্ণ'- এ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এলাকাভেদে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা একেক রকম হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বেশি থাকবে।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে বিজিবি সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক কম। রাজধানীর উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলতে, গুলশান, বনানী, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা যায়। তাছাড়া পুরো দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। নির্বাচন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনা, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রায় সাত লাখ নিরাপত্তা সদস্য মাঠে রয়েছেন। সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ২৪ ডিসেম্বর মাঠে নেমেছেন। দেশের ৩৮৯ উপজেলায় সেনা ও উপকূলবর্তী ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার ‘র্যাব-সাইবার নিউজ ভেরিফিকেশন সেন্টার’ নামে একটি ফেসবুক পেজ চালু করা হয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘সাইবার ওয়ার্ল্ডের যেকোনো নিউজ, তথ্য, ভিডিও সম্পর্কে সন্দিহান হলে কেউ যদি ওই পেইজে যোগাযোগ করে, তাহলে দ্রুততার সঙ্গে আমরা যাচাই করে ফিডব্যাক দেব। একটি টিম সার্বণিক এই দায়িত্ব পালন করবে। যেকোনো তথ্যের মাধ্যমে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হলে তা প্রতিরোধে র্যাব তৎপর রয়েছে।’
এদিকে আজ দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, মানুষ যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে সেজন্য ২৪ ঘন্টা আমাদের মনিটরিং রয়েছে। ভোট চলাকালীন কেউ যাতে কোন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন অথবা পেশীশক্তি ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখব। কন্ট্রোলরুমেও আমরা সার্বক্ষণিক সক্রিয় থাকব। কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।